বনানী কবরস্থানের প্রধান ফটকের বাম পাশে ৭ নম্বর সারি। কিশোর আবদুন নইম খান রিন্টুর লাশ সেখানেই দাফন করা হয়েছিল। পরে কঠোর গোপনীয়তায় বনানী কবরস্থান থেকে তুলে বরিশালে নিয়ে সেখানকার মুসলিম কবরস্থানে ফের দাফন করা হয়। পরিবারের সদস্যরা কড়া সেনা প্রহরায় এই কাজটি করতে গিয়ে সেখানে এক ভয়ংকর সত্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন। পরিবারের একজন সদস্য ঘটনাটি তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের কাছে এভাবে বর্ণনা করেন, ‘রিন্টুর লাশ আছে মনে করে প্রথমে একটি কবর খোঁড়েন সেনা সদস্যরা। কবর খুঁড়ে কাফনের কাপড় সরাতেই বেরিয়ে এলো শেখ রাসেলের মুখ। তাই দেখে আমরা স্তম্ভিত হয়ে পড়ি

এরপর তড়িঘড়ি করে সেই কবর মাটি দিয়ে ঢেকে পাশের আরেকটি কবর খুঁড়ে রিন্টুর লাশ তুলে আনি।’ এটা ঘটেছিল ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এক দিন পর, ১৭ আগস্ট। ওই কালরাতে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্য সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই রাতেই মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে খুনিরা হানা দিয়ে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি তৎকালীন পানিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ আটজনকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রিন্টু।

বনানী কবরস্থানে খুনি সেনারা তড়িঘড়ি দাফন করে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তাঁর তিন সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূসহ নিহত অন্যদের। আবদুন নইম খান রিন্টু অপসোনিন ফার্মা লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত আবদুল খালেক খানের সেজো ছেলে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুর খালাতো ভাই তিনি। ঘটনার সময় রিন্টু ছিলেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত পরিবারের অতিথি। ‘ক্রিডেন্স পপ গোষ্ঠী’ নামের বরিশালের একটি আঞ্চলিক ব্যান্ডদলের লিড গিটারিস্ট রিন্টু টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা থেকে টিম নিয়ে ঢাকায় এসে মন্ত্রীর ওই বাড়িতে ওঠেন।

রিন্টুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, তাঁর বড় ভাই আবদুস সবুর খান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাপ্টেন আবদুস সবুর খান স্বেচ্ছায় অবসর নেন। নিজের ছোট ভাই নিহত হলে তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত পুরনো সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরাই রিন্টুর লাশ বনানী কবরস্থান থেকে তুলে বরিশালে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন। এ বিষয়ে জানতে গত ৮ আগস্ট অপসোনিন ফার্মা লিমিটেডের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুস সবুর খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি  কথা বলতে রাজি হননি।, ১৯৭৫ সালের ১৭ আগস্ট রিন্টুর লাশ বনানী কবরস্থান থেকে তুলে বরিশালে নিয়ে ফের দাফন করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ওই সময় রিন্টু এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। মারা যাওয়ার পর তাঁর পরীক্ষার ফল বের হয়।

১৫ই আগস্ট কালরাতে গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন রিন্টুর গানের দল ‘ক্রিডেন্স পপ গোষ্ঠী’র অন্যতম সদস্য ভোকালিস্ট খ ম জিল্লুর রহমান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রিন্টু, আমিসহ ক্রিডেন্স পপ গোষ্ঠীর ১৩/১৪ জন সদস্য শিল্পমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামানের আমন্ত্রণে ঘটনার তিন দিন আগে ১১ আগস্ট ঢাকায় এসে তৎকালীন পানিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে উঠি।